শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১

অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী অপসারণ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

অনেকসময় স্ক্রীনিং করার পরেও জোয়ারের পানির সাথে অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী ঘেরে প্রবেশ করতে পারে। এগুলো নির্মূল করার ক্ষেত্রে যেসকল রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় সেগুলো ক্রয় করার সময় অবশ্যই তার মেয়াদ, দাম কেমন ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা দরকার। অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন করার জন্য রোটেনন, ব্লিচিং পাউডার, ফসটক্সিন, চা বীজের খৈল, মহুয়া বীজের খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। ঘেরে পানি উত্তোলনের তিন থেকে চার দিন পর যদি অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভুক প্রাণী দমন করা হয় তাহলে ভালো ফলাফল আশা করা যায়। অবাঞ্চিত ও মৎস্যভূক প্রাণী দমন করার অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্যে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও উপযুক্ত কয়েকটি পদ্ধতির বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো:

ক. রোটেনন

রোটেনন হলো ডেরিস নামক পুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ থেকে তৈরি বাদামি রংয়ের পাউডার জাতীয় কীটনাশক যা অবাঞ্ছিত মাছ, পোকা-মাকড় ইত্যাদি দমনে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি জটিল জৈব যৌগ (C23H22O6 ) । এটি Derris ellipticas Lonchocarpus sp জাতীয় গাছের শিকড় গুড়া করে তা পাউডার আকারে রোটেনন হিসেবে বাজারে বিক্রয় করা হয়। রোটেননের শক্তি মাত্রা এর মধ্যে বিদ্যমান মূল কার্যকর উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এতে ৯.১% সক্রিয় রোটেনন থাকে। আরেক শক্তিমাত্রার (৭%) রোটেনন পাওয়া গেলেও ৯.১% শক্তি সম্পন্ন রোটেনন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। রোটেনন প্রয়োগের মাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। তাই অবাঞ্ছিত মাছ, পোকা-মাকড় ইত্যাদি দমনে গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে অধিক মাত্রায় রোটেনন প্রয়োগ করতে হয়। তবে রোটেনন প্রয়োগের সুবিধা হলো এ পদ্ধতিতে মারা যাওয়া মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।। 

প্রয়োপমাত্রা
মাছের প্রজাতি, পরিবেশের তাপমাত্রা, রোটেননের শক্তিমাত্রা ইত্যাদির ওপর রোটেননের প্রয়োগমাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে সাধারণত ৯.১% শক্তিমাত্রার রোটেনন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। নিম্নে ছকে রোটেননের প্রয়োগমাত্রা উল্লেখ করা হলোঃ

শক্তিমাত্রাপ্রয়োগমাত্রা (প্রতি শতক/ফুট পানি)
৭%১৮-২৫ গ্রাম
৯.১%১৬-১৮ গ্রাম

প্রয়োগ পদ্ধতি

অবাঞ্ছিত মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী দমনের জন্য ভোর বেলায় রোটেনন প্রয়োগ করা ভালো। রোটেনন প্রয়োগের পূর্বে জলাশয়ের পানির আয়তন অনুযায়ী রোটেনন পাউডার মেপে নিতে হবে। অতঃপর একটি পাত্রে রোটেনন পাউডার এর সাথে পরিমাণমতো পানি যোগ করে কাই তৈরি করতে হবে। উক্ত কাইকে সমান তিনভাগে ভাগ করে, এক ভাগ দ্বারা ছোট বল তৈরি করে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফলে কাদার নিচের ও উপরিভাগের প্রাণিসমূহ মারা যাবে। অন্য দুই ভাগ পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়। ফলে পানিতে ভাসমান মাছ ও অন্যান্য পোকামাকড় মারা যাবে। তাছাড়া রোটেনন প্রয়োগের পর জাল টেনে পানি উলট- পালট করে দিলে রোটেননের কার্যকারীতা বৃদ্ধি পাবে। ১৫-২০ মিনিট পর মাছ ভাসতে শুরু করলে খুব দ্রুত জাল টেনে মাছ ধরে ফেলতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃত মাছ ধরে ফেলা প্রয়োজন নতুবা এগুলো পুকুরের তলদেশে চলে যাবে। রোটেনন এর কার্যকারীতা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে পানিতে বিদ্যমান থাকে। তবে রোটেনন প্রয়োগের মাধ্যমে চিংড়ি ও কাঁকড়া অপসারণ করা সম্ভব হয় না।

উদাহরণ: ৩ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ১০ শতকের একটি পুকুরে ৯.১% শক্তিমাত্রার রোটেনন প্রয়োগ করতে কী পরিমাণ রোটেনন লাগবে তা নিম্নের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়- রোটেননের পরিমাণ = পুকুরের আয়তন (শতক) x গভীরতা x প্রয়োগ মাত্রা = ১০ × ৩ × ১৮ = ৫৪০ গ্রাম

রোটেনন প্রয়োগের ফলে মাছ পানি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না, কারণ এটি পানিতে থাকা দ্রবীভূত অক্সিজেন নষ্ট করে ফেলে। পানি হতে মাছ যখন দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য নিঃশ্বাস নেয় তখন পানিতে দ্রবীভূত রোটেনন এর বিষক্রিয়ার ফলে মাছের ফুলকার ল্যামেলি ফেটে যায়। ফলে দ্রবীভূত অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে মাছের দেহে পরিবহণ সম্ভব হয় না। ফলে মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পারার কারণে মারা যায়। রোটেনন প্রয়োগের ফলে নিম্নলিখিত বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় 

O2 + Hb = HbO2 (অক্সিজেন + হিমোগ্লোবিন - অক্সিহিমোগ্লোবিন)

রোটেনন রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বা উচ্চ তাপমাত্রায় অধিক কার্যকর। এছাড়া অম্লীয় ভাবাপন্ন ও নিরপেক্ষ অর্থাৎ পিএইচ ৭ বা তার কম আছে এরূপ পানিতে রোটেনন দ্রুত কাজ করে।

 

খ. ফসটক্সিন/কুইকফস/ সেলফস

ফসটক্সিন ট্যাবলেট খুবই বিষাক্ত। গুদামে পোকামাকড় মারার কাজে এ ট্যাবলেটের ব্যবহার অত্যধিক। কিন্তু ইদানিং পুকুরে অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী দমনের জন্য ফসটক্সিন ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফসটক্সিন প্রয়োগের ফলে পুকুরে থাকা সব ধরনের প্রাণীই মারা যায়। তাছাড়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় সতর্কতার সাথে ফসটক্সিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নিচের প্রয়োগমাত্রা অনুসরণ করা যায়-

সারণি: নার্সারি পুকুরে ফসটক্সিনের প্রয়োগের মাত্রা

প্রয়োগ পদ্ধতি

ফসটক্সিন ট্যাবলেট পুকুরের পানিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। অগভীর জলাশয়ে এর কার্যকারিতা বেশি হওয়ায় ফসটক্সিন প্রয়োগের পূর্বে পুকুরের পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে কমিয়ে নেয়া উচিত। ফসটক্সিন প্রয়োগের পর জাল টেনে পুকুরের পানি উলট-পালট করে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ট্যাবলেট প্রয়োগের ১-২ ঘণ্টা পর মাছ ভাসতে শুরু করলে জাল দিয়ে সব মরা মাছ উঠিয়ে নিতে হবে।

বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ৮-১০ দিন (প্রায়)

উদাহরণ: ৪ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ২০ শতকের একটি পুকুরে কী পরিমাণ ফসটক্সিন ট্যাবলেট লাগবে তা নিম্নের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়-
ফসটক্সিনের পরিমাণ = পুকুরের আয়তন (শতক) × পভীরতা x প্রয়োগ মাত্রা = ২০ × ৪ × ১ = ৮০ টি

গ. ব্লিচিং পাউডার

সাদা রং এর ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট [Ca(CIO)2] পাউডারই মূলত ব্লিচিং পাউডার নামে পরিচিত। পানি বিশোধনের পাশাপাশি এটি দ্বারা অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভুক প্রাণী দমন করা যায়। ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের ফলে পুকুরে আর চুন প্রয়োগের দরকার হয় না কারণ এটি চুনের কাজও করে থাকে। এটি ব্যবহারে পুকুরের মাছ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, অন্যান্য রোগজীবাণু ইত্যাদি মারা যায়। নিম্নরূপ প্রয়োগমাত্রা অনুযায়ী ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যায়-

সারণি: পুকুরে ব্লিচিং পাউডারের প্রয়োগমাত্রা

প্রয়োগ পদ্ধতি

পরিমাণ অনুযায়ী পাউডার নিয়ে একটি পাত্রে পানি দিয়ে গুলে দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর দ্রবণটি পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সকালবেলা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। পুকুরে পাউডার প্রয়োগের আধা ঘন্টার মধ্যে মাছ মরে ভেসে উঠা শুরু করলে দ্রুত জাল টেনে মৃত মাছ তুলে ফেলা প্রয়োজন। বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ৮-১০ দিন (প্রায়) 

উদাহরণ: ৫ ফুট গভীরতার ২০ শতক পুকুরে কী পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার লাগবে তা নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়-
ব্লিচিং পাউডারের পরিমাণ: পুকুরের আয়তন (শতক) x গভীরতা x প্রয়োগ মাত্ৰা = ২০ × ৫ × ১ = ১০০ কেজি

ঘ. চা বীজের খৈল

যে সমস্ত পুকুরের পানি নিষ্কাশনের বা শুকানোর সুযোগ নেই সে সমস্ত পুকুরের মৎস্যভূক প্রাণী, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি মেরে ফেলার জন্য চা বীজের খৈল অত্যন্ত কার্যকর, যা চা বীজের গুড়া থেকে তৈরি করা হয়। চা বীজের খৈলের মধ্যে স্যাপোনিন নামক পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাছের লোহিত রক্ত কণিকাকে জমাট বেধে ফেলে ফলে মাছ মারা যায়। চা বীজের খৈলের বিষাক্ততার মেয়াদকাল ৩ দিন। এটি দ্বারা মারা যাওয়া মাছ নিশ্চিন্তে খাওয়া যায় এবং এটি পুকুরে জৈব সার হিসেবে কাজ করে। যা প্লাংকটনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। এটি প্রয়োগের ৩-৫ ঘন্টার মাঝে মাছ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মারা যায় এবং পানিতে ভাসতে শুরু করে। তবে পানির তাপমাত্রা অধিক হলে এর কার্যকারীতা অনেক বেশি হয় এবং পানির তাপমাত্রা কম হলে এটি ধীরে কাজ করে। এটা প্রয়োগে অবাঞ্ছিত মাছ এর পাশাপাশি ব্যাঙাচি, জোক, শামুক, কিছু কিছু পোকামাকড় ইত্যাদি মারা যায়। তবে পরিমিত মাত্রায় চা বীজের খৈল ব্যবহারের ফলে পুকুরের পানিতে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার যেমন- রটিফার, কপিপোড ইত্যাদির কোনো ক্ষতি হয় না। নিচের ছকে চা বীজ খৈলের প্রয়োগমাত্রা উল্লেখ করা হলো-

সারণি: পুকুরে চা বীজ খৈলের প্রয়োগ মাত্রা

প্রয়োগ পদ্ধতি
প্রয়োজনীয় পরিমাণ চা বীজের খৈল পানিতে গুলে নিয়ে পাতলা দ্রবণ তৈরি করতে হবে ও সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োগকালীন পুকুরের পানির গভীরতা যত কম হবে ফলাফল তত ভালো পাওয়া যাবে। খৈল প্রয়োগ করার ২০-৩০ মিনিট পর মাছ মারা যেতে শুরু করবে। পরবর্তীতে জাল দিয়ে মৃত মাছ দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ২-৩ দিন (প্রায়)।

ঙ. মহুয়া বীজের খৈল

ল্যাটিফোলিয়া প্রজাতির মহুয়া বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। দিনাজপুর ও মধুপুর অঞ্চলে এই গাছ অধিক পরিমাণে জন্মে। বীজ হতে তেল নিষ্কাশনের পর যে খৈল অবশিষ্ট থাকে, তাতে স্যাপোনিন নামক বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে এটি বিষ হিসেবে কাজ করে। মহুয়া বীজের খৈল ব্যবহারের ফলে প্রথমে এটি বিষ হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তীতে সার হিসেবে পুকুরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারের ২ ঘন্টার মাঝেই এর বিষক্রিয়া শুরু হয় এবং মাছ মারা যায়। এ খৈলের ব্যবহার মাত্রা নিম্নে দেওয়া হলো-

সারণি: পুকুরে মহুয়া বীজ খৈলের ব্যবহার মাত্রা

প্রয়োগ পদ্ধতি
সামান্য পরিমাণ পানিতে পরিমাণমতো মহুয়া বীজের খৈল প্রথমে গুলে নিতে হবে। পরে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। প্রখর সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সমস্ত পুকুরে যথাযথভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। এটি ব্যবহারের ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে মাছ মারা যেতে শুরু করবে। পরবর্তীতে দ্রুততার সাথে জাল নে মৃত মাছ ধরে ফেলতে হবে যাতে করে পুকুরের পানির গুণগতমান নষ্ট না হয়। বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ৩-৪ দিন (প্রায়)।

সাবধানতা

  • অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী দমনের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যগুলো পানিতে মিশ্রিত করার সময় এবং পুকুরে ছিটানোর সময় যেন নাকে/মুখে না ঢোকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  •  অবাঞ্ছিত প্রাণী দূর করার ক্ষেত্রে ব্লিচিং পাউডারই যথেষ্ট তবে ভালো ফলাফলের জন্য রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • নার্সারি পুকুরে যেন অতিরিক্ত শেওলা জন্মাতে না পারে সেজন্য নিয়মিত হররা টানা প্রয়োজন। 
  • রোটেনন বা ব্লিচিং পাউডার পানিতে ছিটিয়ে দেওয়ার সময় বাতাসের অনুকূলে প্রয়োগ করতে হবে।
  • ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যগুলো প্লাস্টিকের গামলায় গোলানো উচিত নয়। যে কোনো রাসায়নিক বা কীটনাশক শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
Content added By
Promotion